পৃথবীতে রোগ জীবাণুর কোন শেষ নেই। ২০২০ সালে সারা পৃথিবী করোনা নামের নতুন আবিস্কৃত এক জীবাণুর জন্য ভোগ করল পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন যন্ত্রণা।
খুব দ্রুত করেনা ভাইরাসের টিকা আবিস্কার হলেও আমাদেরকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব ছিল। এর পরে আবারোও নতুন কোন ভাইরাসের আগমন হতেই পারে।
আমরা যে স্বাস্থ্যবিধিগুলো শিখলাম, আমাদেরকে সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
আমরা যদি কষ্ট করে এই চর্চাগুলোকে ধরে রাখবার চেষ্টা করি, তাহলে আমরাই লাভবান হবো।
আমাদের চারিপাশে অসংখ্য রোগজীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। আমাদেরকে সব সময় চেষ্টা করতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য।
কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের কে করে তুলবে আরো বেশি শক্তিশালী।
আমাদের অবশ্যই করণীয় বিষয়গুলো হলোঃ
(১) নিয়মিত ফেস মাস্ক
———————————
করোনা ভাইরাসের টিকা নিলেও নিয়মিত ফেস মাস্ক ভীষণ জরুরি। করোনা ভাইরাস ছাড়াও আমাদের চারিপাশে রয়েছে অসংখ্য রোগ জীবাণু। যা আমাদের নাক মুখ দিয়ে আমাদের ফুসফুসে পৌছে। আমাদের ফুসফুসকে করে দিতে পারে দুর্বল। পরিণামে তৈরী হতে পারে বহুবিধ শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখ।
এই জন্য বাসার বাইরে নিয়মিত ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে বাতাসের ক্ষতিকর লেড, সিসা, সি.এফ.সি (CFC বা ক্লোরোফ্লুরো কার্বন) গ্যাস, বাতাসে ভেসে বেড়ানো রোগ জীবাণু আমাদের ফুসফুসে সহজে প্রবেশ করতে পারবে না।
(২) ওজন নিয়ন্ত্রণ
—————————
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মানুষ বিভিন্ন ধরণের অসুখে আক্রান্ত হয়। অকালে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। আর যদি রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের কারো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা রক্তে উচ্চমাত্রার কোলস্টেরলের সমস্যা থাকে, তাহলে অধিক ওজন সম্পন্ন ব্যক্তিরা এই ধরণের অসুখগুলোতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশি।
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী স্থুলকায় ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। যদি সারাদিন অফিসে বসে কাজ করতে হয়, হাটাচলার সুযোগ থাকে না, তাহলে চেষ্টা করবেন লিফ্ট এর পরিবর্তে সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য।
(৩) ঝেড়ে ফেলুন হতাশা
———————————— হতাশা বিষন্নতা দিনের পর দিন থাকলে, তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। হতাশা দেহের সকলের অংগের উপর ফেলে নেতিবাচক প্রভাব।
(৪) রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
—————————————— ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলস্টেরল, ফ্যাটি লিভার বা নির্ণয় হওয়া অসুখ থাকলে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন।
(৫) দৈহিক পরিশ্রম ভীষণ জরুরী
————————————-
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রমের কোন বিকল্প নাই। গৃহস্থলী কাজগুলো নারী, পুরুষ সবাই মিলে করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সুবিধা হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা থাকবে নিয়ন্ত্রণে। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, রোগ প্রতিরোধ শক্তি ঠিক থাকে। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বেড়ে যায় রক্তে ইনফেকশানের মাত্রা এবং খুব দ্রুত একজন ডায়াবেটিক রোগী তখন বিভিন্ন রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হয়।
(৬) পুষ্টিকর খাবার
——————————
রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য্য। সবুজ হলুদ শাক সব্জি, মৌসুমী ফল আমাদেরকে দূরে রাখবে বহুবিধ অসুখ থেকে। রসুন, ব্রকলি, আদা, লেবু, গ্রীণ টি, পালং শাক, কালোজিরা, মেথি এই খাবারগুলোর পুষ্টি গুণ রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে আমাদেরকে যুদ্ধ করার শক্তি যোগাবে।
(৭) ধর্ম কর্ম মেডিটেশান ও পরিচ্ছন্নতা
————————————
সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে, অকে রোগ জীবাণু থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত গোসল, পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা, বাসা পরিষ্কার করা অপরিহার্য্য। পরিষ্কার থাকলে অনেক ধরণের চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ধর্ম-কর্ম, মেডিটেশন কমিয়ে দেয় মানসিক চাপ। মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
(৮) পুরো দেহের চেকআপ
————————————– বছরে অন্তত একবার পুরো দেহের চেক আপ করালে লুকায়িত কোন অসুখ থাকলে তা ধরা পড়বে।
তখন সেইভাবে পদক্ষেপ নিলে সুস্থ থাকা যাবে। দেহের মধ্যে যে কোন অসুখ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে।
(৯) পানি পান
————————-
নিয়মিত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করলে অনেক রোগ জীবাণু আমাদের ঘাম ও মূত্রের সাহায্যে শরীরের বাহিরে চলে যাবে। এতে আমাদের কিডনী, লিভার ভালো থাকবে। অফিসের কাজের মধ্যে পানি খাওয়া সম্ভব নয়। বাসায় ফিরে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
(১০) ধূমপান মাদক বর্জনীয়
——————————————-
সব ধরণের মাদক জর্দ্দা, বিড়ি, সিগারেট, তামাক থেকে দূরে থাকতে হবে।
(১১) রৌদ্র ভীষণ উপকারি
————————————— সূর্যের আলো আমাদের রক্তে ভিটামিন ডি তৈরীতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের হাড়কে করে মজবুত। বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অতিরিক্ত কড়া রোদ নয়, সকালবেলার রোদ যা আপনার ত্বকের জন্য খুব বেশি অসহনীয় নয়, এমন রোদে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়াবেন।
আপনার মুখ রৌদ্রের বিপরীতে থাকাই শ্রেয়। এতে ত্বকের রোগ জীবাণু ধ্বংস হবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ছোট বড় সবার জন্য রৌদ্রের তাপ ভীষন জরুরী। তবে অতিরিক্ত তাপে দাঁড়াবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে।
ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা